ছাদেকুর রহমান ১০ জানুয়ারী ২০২১, ১২:০৫
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ লিখেছেন. "চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড় এ চোখে ঘুম আসেনা।”! যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয়পূরন হয়, তাকেই খাদ্য বলে। জীবনধারনের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। খাদ্য ছাড়া মানুষ বেচেঁ থাকতে পারে না। খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার মানুষ জন্মগতভাবেই পাই।
পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের,শ্রেণীর ও স্তরের মানুষ রয়েছে।ধনী, গরিব মিলেই আমাদের এ পৃথিবী। যার ফলে মানুষের অবস্থা ও ভিন্ন ভিন্ন।যেমনি ভাবে আঁধার আছে বলেই আলোর মূল্য তেমন ভাবে গরিব আছে বলেই ধনীর মূল্য।
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন ব্যক্তি মৌলিক পুষ্টিগত চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত খাবার খেতে অক্ষম হলে তাকে ক্ষুধার্ত বলে। বর্তমান পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ। যার মধ্যে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত।অবাক হওয়ার বিষয় প্রতিবছর বিশ্বে মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য অপচয় হয়।অথচ প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ তিন বেলা খেতে পান না।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠন-ফাও'' এর মতে, প্রতি বছর ১৩০ কোটি টন খাবার অপচয় হচ্ছে সারাবিশ্বে,যা দিয়ে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষের খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব। দ্যা কনজুমার ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যায়।
অন্যদিকে অপরিমিত খাবারের কারণে সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। দক্ষিন এশিয়ায় প্রতিবছর মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ২১কেজি। এএফও এর করা সমীক্ষা অনুযায়ী,বাংলাদেশে প্রতিবছর উৎপাদিত মোট খাদ্যের ৩০ শতাংশই অপচয় হয়, যার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ।
আমাদের করণীয়: রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে (বুখারী)।” অন্য এক হাদিসে আবু যর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “হে আবূ যর! যখন তুমি ঝোল ওয়ালা তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।”
মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো অভুক্তকে খাবার খাওয়ানো। কিন্তু হাজারো অভুক্ত না খেয়ে ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমাদের দৃষ্টি কাটেনা৷ আমরা তৃপ্তিসহকারে হরেক রকমের খাবার খাচ্ছি, অথচ আমাদের পাশে অনেকেই এক রকমের খাবারও খেতে পারছে না সেদিকে আমাদের দৃষ্টি নেই৷
আমরা চাইলে তাদের খেয়াল রাখতে পারি, রাসুলের হাদিস অনুসরণ করে অনাহারী প্রতিবেশীর মুখে দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে পারি। আমরা অনেকে হয়তো ভাবতে পারি,আমরা খাবার কেনো অন্যকে দিবো! আল্লাহ যার রিজিক তার জন্য বরাদ্দ রেখেছেন। ভাববেন না অন্যকে কিছু অংশ দেওয়াতে আপনার রিজিক ফুরিয়ে যাবে।নিজের মুখে খাবার তুলে নেওয়ার আগে একবার ভাবুন, অনাহারে কাতরানো শিশুটির কথা।
তাই আসুন, আমরা ভেবে চিন্তে খাবার খাই। খাবারের অপচয় কমিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আমরা সকলে চাইলে ক্ষুধা মুক্ত একটি পৃথিবী উপহার দিতে পারবো।
লেখক
ছাদেকুর রহমান
আবুধাবি,সংযুক্ত আরব আমিরাত।