৮৪২ মিনিট আগের আপডেট; রাত ১:২০; শুক্রবার ; ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার মগনামায় ১৭ মামলার আসামী ইউনুছ চৌধুরী চেয়ারম্যান প্রার্থী!

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া ০৮ নভেম্বর ২০২১, ২৩:৪০

পেকুয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। ইতোমধ্যে যার যার মত করে প্রকাশ্য ও গোপনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রার্থীরা। 

এসব চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কেউ জনপ্রিয় আবার অজনপ্রিয় আবার কেউবা বহু ফৌজদারী মামলার আসামী হয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে।

ইতোমধ্যে মগনামা ইউনিয়ন থেকে দলীয় ও স্বতন্ত্রভাবে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেন। তার মধ্যে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, চুরি ও ছিনতাই, ডাকাতি ও জলদস্যুতা, চাঁদাদাবী ও চাঁদাগ্রহণ, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, অপহরণ, জননিরাপত্তা আইন, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ মাথায় নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ইউনুছ চৌধুরী।

তিনি মগনামা ইউনিয়নের সিকদার বাড়ির মৃত জিল্লুল করিম চৌধুরীর সন্তান। সদ্য মগনামা আফজালীয়া পাড়ার জয়নাল হত্যাসহ আরো কয়েকটি মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে  বর্তমানে কারাগারে থাকলেও  স্ত্রী ও তার বাহিনীর সদস্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ে শীর্ষ জলদস্যু এবাইদুল্লাহ হাতে গড়ি হয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়ান। শুরু করেন সাগরে ডাকাতি ও জলদস্যুতা। জলদস্যু এবাইদুল্লাহ কারাগারে মৃত্যু হলে অপরাধ জগতের প্রধান হয়ে উঠেন ইউনুছ চৌধুরী। তারপর থেকে  হামলা, নির্যাতন, হত্যা চেষ্টা, হত্যা, ডাকাতি, জলদস্যুতা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধ শুরু করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে ২৪ টি মামলা হয়েছে। ১৭ টি মামলার রেকর্ড এ প্রতিনিধির হাতে রয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে অস্ত্র ও ইয়াবা নিয়ে আর ২০২১ সালে জয়নাল হত্যাসহ আরো বেশ কয়েকটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বর্তমানে তিনি কারাগারে অবস্থান করলেও তার বাহিনীর সদস্যরা তাকে প্রার্থী করে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠক করে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনের আগে এলাকার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এমনকি পেকুয়ার দুই সাংবাদিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নিউজ কভার করতে গিয়ে তাদের হুমকির মধ্যে পড়েছে। তার অনুসারীরা ফেসবুক পোষ্ট দিয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনুছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালে কক্সবাজার সদর থানায় জিআর ৩৬৬/৮৯ নং মামলামূলে ৩৮২ ধারা, ১৯৯৯ সালে ২৩৯/৯৯ নং মামলামূলে ৩০৭ ধারা, ২০০১ সালে জিআর ৮১ নং মামলামূলে  জননিরাপত্তা আইন, একই বছর ১১/২০০১ নং মামলামূলে ৩৯৯ ধারা, জিআর ৩৮/২০০১ মামলামূলে ৩৬৫ ধারা, ২০০৩ সালে জিআর ১৭/২০০৩ নং মামলামূলে ৩৭৯ ধারা, ২০০৫ সালে ২৯১ নং মামলামূলে সিআর ৩৫৫ ও ৩৭৯ ধারা, সিআর ১০৩ মামলামূলে ৩৮৪/৩৭৯ ধারা, ২০০৮ সালে জিআর ৪০ নং মামলামূলে ৩৭৯ ধারা, ২০০৯ সালে জিআর ৯৩ নং মামলামূলে ৩২৬ ও ৩০৭ ধারা, একই বছর জিআর ১৭১ নং মামলামূলে ৩০২ ধারা, ২০১০ সালে জিআর ১২৬, ২০১১ সালে জিআর ৬৬ নং মামলামূলে ৩৮৫, ৩৮৬, ৩২৬ ও ৩০৬ ধারা, ২০১৪ সালে জিআর ৮০ নং মামলামূলে ৩২৬, ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারা, ২০১৭ সালে জিআর ৫২ ও জিআর ৫৩ নং মামলামূলে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইন ও সর্বশেষ মগনামার আলোচিত জয়নাল হত্যা মামলায় পরিকল্পনাকারী হিসেবে মামলার আসামী হয়। 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, স্কুল জীবনে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অপরাধ কর্ম চলমান রেখে আ'লীগে যোগদান করেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

বিএনপি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা মো: ইলিয়াসের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরপর জাফর আলম চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ নির্বাচিত হলে আ'লীগের পতাকাতলে চলে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি।

মগনামার বেশ কয়েকজন স্থানীয় ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বিগত সময়ে ভাল হয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তার অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখেন। সেই সময় তার হাতে নির্মম নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়  ইউপি সদস্য নিরহ আশরাফুল মজিদ। স্থানীয় এক বৃদ্ধা মহিলার সহায়তায় সেই যাত্রায় বেচে যান তিনি।

সেই সময় যারাই তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তার উপর চালানো হত নির্মম নির্যাতন ও অত্যাচার। সেই দুঃখের স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ান তারা। তিনি এবারেও ভোটের মনোনয়ন ফরম নেয়ায় আতংকে দিনাতিপাত করছেন তারা এমন অভিযোগ তাদের।