৭৩৮ মিনিট আগের আপডেট; দিন ১১:৩১; বুধবার ; ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গোল্ডেন বুট ‘অতিমানব’ এমবাপ্পের

আমার কক্সবাজার ডেস্ক: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৭

শুরুটা করেছিলেন এনের ভ্যালেন্সিয়া। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই জোড়া গোল। ইকুয়েডরের এই তারকা স্ট্রাইকার জালের দেখা পান নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও। ইকুয়েডর গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ায় থামতে হয় ভ্যালেন্সিয়াকে। তবে ছুটে চলেছিলেন লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, হুলিয়ান আলভারেস, অলিভিয়ের জিরুরা।

সবচেয়ে বেশি গোল করে তাঁরা গোল্ডেন বুটের লড়াইটা টেনে আনেন ফাইনাল পর্যন্ত। ৩২ দলের ৮৩২ ফুটবলারের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা কিলিয়ান এমবাপ্পের। ফাইনালে হ্যাটট্রিকে মোট ৮ গোল করে এই ফরাসি তরুণই জিতলেন এবারের সোনার জুতা।

তাতে বিশ্ব ফুটবলের যুবরাজ থেকে রাজা হওয়ার পথে এগিয়ে গেলেন এক ধাপ। কেবল দুই বিশ্বকাপ খেলে তাঁর গোল ১২টি। এত কম বয়সে এত বেশি গোলের কীর্তি নেই কারো। খোদ তিন বিশ্বকাপজয়ী পেলের গোল ১২টি। এমবাপ্পে থামবেন কোথায়?

এমবাপ্পে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করে খুলেছিলেন গোলের খাতা। ডেনমার্কের সঙ্গে পরের ম্যাচে করেন জোড়া গোল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ছিলেন বেঞ্চে। বদলি হয়ে শেষ দিকে নামলেও পাননি গোলের দেখা। শেষ ষোলোতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর জোড়া গোলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ফ্রান্সের। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে ভুগেছিলেন গোলখরায়।

সেরাটা হয়তো জমা রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। বড় নামের খেলোয়াড় তো বড় মঞ্চেই জাত চেনাবেন নিজের। আর্জেন্টিনা ৭৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন মহানায়ক মেসি-বীরত্বে সহজেই ৩৬ বছরের খরা কাটাতে চলেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ৮০ থেক ৮১—এই ৯৭ সেকেন্ডের ঝড়ে এমবাপ্পে তছনছ করে দিলেন সব। দুই গোল করে ফ্রান্সকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে। পেলে, ভাভাদের মতো গোল করলেন দুই বিশ্বকাপ ফাইনালে। এরপর আর্জেন্টিনা যখন ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে, তখন শেষ বেলায় আরো এক গোল এমবাপ্পের।

১৯৬৬ সালে জিওফ হার্স্টের পর ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়ের কীর্তিটাও গড়লেন ফরাসি যুবরাজ। নিজেও হয়ে যান কাতারের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে শিরোপাটা জিতলে পূর্ণতা পেত অর্জনটা। আফসোস, শুধু শিরোপাটাই পাওয়া হয়নি এমবাপ্পের। বেশি গোল করলেই গোল্ডেন বুট—মোটা দাগে নিয়ম এটাই। তবে কাতারে ফাইনালের আগে সমান ৫ গোল ছিল মেসি ও এমবাপ্পের। কিন্তু পুরস্কারটা পাবেন একজনই, যৌথভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে নিয়মটা হলো, গোল সমান হলে প্রথমে দেখা হবে কার অ্যাসিস্ট কতটি। মেসির অ্যাসিস্ট তিনটি আর এমবাপ্পের দুটি। তাই পুরস্কারটা পেতেন মেসি।

ফাইনালে যদি এমবাপ্পে একটি অ্যাসিস্ট করতেন তখন সমতায় থাকতেন মেসির। তখন দেখা হতো, কে কত কম মিনিট মাঠে খেলেছেন। ফাইনালের আগে মেসি মাঠে ছিলেন ৫৭০ মিনিট আর এমবাপ্পে ৪৭৭ মিনিট। এই অঙ্কে পুরস্কারটা যেত এমবাপ্পের হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত ৮ গোল করেই সোনার জুতাটা পেলেন এমবাপ্পে। 

লিওনেল মেসি আগের চারটি বিশ্বকাপে নক আউটে গোলের দেখা পাননি। কাতারে সেই মেসি ৩৫ বছর বয়সে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য স্নায়ুচাপের নক আউটে। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোলের শুরু ৩৫ মিনিটে লক্ষ্যভেদ করে। কোয়ার্টার ফাইনালে কঠিন পরীক্ষা ছিল ডাচদের সঙ্গে। উত্তীর্ণ সেখানেও। তাঁর জাদুকরী পাসে নাহুয়েল মলিনা গোল করার পর আর্জেন্টিনাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন নিজেই। ৭৩ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টিটা ভুল করেননি জালে জড়াতে।

সৌদি আরবের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলের শুরুটা করেছিলেন মেসি। তবে পেনাল্টি মিস করেন পোল্যান্ডের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে আবারও পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেটা থেকে ভুল করেননি আর। ফাইনালেও ১২ গজের চাপ কাটিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করলেন পেনাল্টি থেকেই। তাঁর ৬ গোলের ৪টিই পেনাল্টি থেকে। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে নক আউটের সব ম্যাচে গোল করার কীর্তিটাও হয়েছে তাতে। অলৌকিক পায়ে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে বল জালে জড়িয়েছেন একবার করে।

আর ফাইনালে করলেন জোড়া গোল। তা-ও মুহূর্তটা কখন? কিলিয়ান এমবাপ্পে নামের আরেক জাদুকর যখন সবটুকু আলো কেড়ে নিতে যাচ্ছিলেন নিজের দিকে। পেনাল্টির পর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে জাদুকরী গোলে ফুটবলবিশ্বই যেন আলোকিত করলেন মেসি। সর্বকালের সেরার বিতর্কও কি পেছনে ফেললেন এই কীর্তিতে? পেলে, ম্যারাডোনা, ক্রুইফ, রোনালদো—কত কিংবদন্তি খেলেছেন বিশ্বকাপে। নক আউটের পাহাড়সমান চাপ সামলে টানা চার ম্যাচে গোল নেই কারো। নিজেকে নতুন চূড়ায় তুলে শেষ বিশ্বকাপটা এভাবেই রাঙিয়ে গেলেন ভুবন ভোলানো মেসি।

গত বিশ্বকাপে ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতা হ্যারি কেইন নিষ্প্রভ ছিলেন এবার। কাতারে মাত্র ২ গোলই করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক। কেইনের মতো ৬ গোল করে ২০১৪ সালে পুরস্কারটা পান কলম্বিয়ার হামেস রোদ্রিগেস। ২০১০ সালে থমাস মুলার আর ২০০৬-এ মিরোস্লাভ ক্লোসে ৫ গোল করেই পান গোল্ডেন বুট। ২০০২ সালে ব্রাজিলের রোনালদো করেছিলেন ৮ গোল। এর আগে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ছয় আসরে ৬টির বেশি গোল পাননি কেউই। এবার বদলাল ছবিটা। ৮ গোলে পুরস্কারটা জিতলেন এমবাপ্পে।