আসিফ সিদ্দিকী ২৬ জানুয়ারী ২০২৩, ১৫:১১
মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধরে রাখতে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নামকরণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করছে। দেশব্যাপী বিশেষায়িত কবরস্থান নির্মাণ করে স্মৃতি ধরে রাখছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধার নামে ছোট্ট তিনটি গেট নির্মাণ করতেই ৩ বছর পার করছে কক্সবাজার জেলা পরিষদ। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার।
জেলা পরিষদের সদস্যের দায়িত্বে থাকার সময় জাহিদুল ইসলাম লিটু কক্সবাজারের চকরিয়ার তিনটি গেট নির্মাণের উদ্যোগটি নেন। অন্য সব সদস্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গেট নির্মাণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নেন তিনি। তখন জেলা পরিষদ সদস্যের তহবিল থেকে আর্থিক বরাদ্দও দেন। এর পর নানা জটিলতা পেরিয়ে সেই গেট নির্মাণ শুরু হয় দেড় বছর পর। এরইমধ্যে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য জেলা পরিষদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করেন লিটু। এরপর থেকেই মূলত কাজ বন্ধ হয়ে যায় আর এগোয়নি।
জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ধরে রাখতেই সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অর্থবরাদ্দ দিয়ে কাজও শুরু হয়েছিল। এতদিনেও কাজ শেষ না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, আমার পদত্যাগের পর জেলা পরিষদ চাইলে সেটি বাস্তবায়ন করে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারতো সেটা করাও উচিত ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। আমি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য এই কাজটি করতে চেয়েছিলাম। এখন নতুন পরিষদও চাইলে সেটি করতে পারে।
জানা গেছে, কাকারায় বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী, লক্ষ্যারচরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নুুরুল আলমের নামে এই স্মারকগেট নির্মাণ এখন মাঝপথে বন্ধ আছে।
জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকীর বড় সন্তান শারমিন নেওয়াজ নিগার বলেন, ‘এটা আমাদের পরিবারের জন্য লজ্জাকর হয়েছে। দুই লাখ টাকার একটি গেট নির্মাণ করতে এত সময় লাগবে জানলে আমরা আগেই সায় দিতাম না। এতে জেলা পরিষদের দৈন্যতাই ফুটে উঠেছে। মাঝখানে কাজ বন্ধ হওয়ার পর আমরা নিজেদের উদ্যোগে বাকি কাজ সমাপ্তের মৌখিক অনুমতি চাইলেও সেটি দেওয়া হয়নি।’
কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে তখন এমন কাজ সত্যিই দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই কাজটি বাস্তবায়ন করতে অর্থবরাদ্দ খুব বেশি দরকার নেই। সদিচ্ছা-আন্তরিকতা প্রয়োজন।
শুরু থেকেই এই প্রকল্পের কাজটি তদারকি করছিলেন জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তার কথা ও গা ছাড়া ভাব দেখা গেছে। তিনি বলেন, জাহেদুল ইসলাম লিটু সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করায় নতুন করে বরাদ্দ না পাওয়ায় গেট নির্মাণকাজ আর হয়নি। সদস্যরা বরাদ্দ না দিলে এখানে আমার কি করার আছে?
কক্সবাজার জেলা পরিষদে এখন নতুন নির্বাচিত পরিষদ কাজ শুরু করেছে। জানতে চাইলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নামে অসমাপ্ত গেটগুলো নির্মাণ সম্পন্ন করতে আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে।