৩৩৭ মিনিট আগের আপডেট; দিন ৩:৩৬; শনিবার ; ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩

হাসানের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া যে দরজা খুলে দিয়েছে

আমার কক্সবাজার ডেস্ক ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৪৯

ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক বৈরিতা নিয়ে নতুন করে বলার দরকার নেই। দুই প্রতিবেশি দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দের খড়ক পড়েছে ক্রিকেটেও। লম্বা সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। এখন ক্রিকেটে দুই দেশের মুখোমুখি হওয়া পুরোপুরি নির্ভর করে বৈশ্বিক ইভেন্টের ওপর।
 
তবে দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা ছাপিয়ে প্রাসঙ্গিক হয়েছে অন্য কিছুও। সেটা কী? নিশ্চয়ই কিছুটা আঁচ করতে পারার কথা! ভালোবাসাই পেরেছে দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দকে পেছনে ফেলতে। যেমনটা দেখা গেছে শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জার ক্ষেত্রে। দুই দেশের জটিলতা ভুলে পাকিস্তান অলরাউন্ডার মালিককে জীবনসঙ্গী করে নেন ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া।

একই ব্যাপার হাসান আলি ও সামিয়ার ক্ষেত্রেও। পাকিস্তানি পেসার হাসানের সঙ্গে গাঁটছটা বাঁধেন ভারতীয় সামিয়া। সামিয়া পেশায় একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ভারতের হারিয়ানা রাজ্যের সামিয়ার সঙ্গে হাসানের পরিচয় তাঁর এক বান্ধবীর মাধ্যমে।

২০১৯ সালে দুবাইয়ে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানেই আছেন সামিয়া। ২০২১ সালে সামিয়ার প্রথম সন্তানের আগমন সামনে রেখে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তাঁর মা। কিন্তু বিয়ের পর বাবা লিয়াকত খানের এখনো মেয়ের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি, নাতনীকেও কোলে তুলে বাহুডোরে জড়াতে পারেননি। এই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ অক্টোবর।

আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান মহারণের দিন। তাও কী কাকতালীভাবেই না দেখা হচ্ছে! পাকিস্তানের বিশ্বকাপের দলে ছিলেন না হাসান। শেষ মুহুর্তে নাসিম শাহর চোট এই পেসারের বিশ্বকাপ দরজা খুলে দিয়েছে। 

শুধু কী বিশ্বকাপ দরজা? একটি পরিবারের একত্রিত হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণেরও যে সুযোগ হয়ে গেল তাতে। তা লিয়াকত কীভাবে মেনে নিলেন এই মেয়ের এই চাওয়া? যেখানে সীমানার এপার-ওপারের দুই দেশের মুখ দেখাদেখি বন্ধ বহুদিন ধরে। 

গল্পটা ৬৩ বছর বয়সী লিয়াকতের মুখেই শোনা যাক, 'আমার পুরো জীবন রুমির (কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি) একটি কথার খুব প্রভাবিত। আমি আমার কলেজ জীবনে তাঁর এই কথাটা পড়েছিলাম, বাইরের চিৎকার নয়, আপনার মনের কথা শুনুন। আমার মেয়ে যখন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছিল তখন একদিন আমাকে হাসানের সম্পর্কে বলে। আমি আমার মেয়ের সিদ্ধান্তে কোনো সন্দেহ রাখি নাই।'

লিয়াকতের উল্টো জিজ্ঞাসা, 'তাহলে পড়ালেখার মূল কি? যদি আরেকজনের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত ছাপিয়ে দিতে হয়। সে শিক্ষিত, স্বাধীন। আশপাশের মানুষজন কি ভাবছে, সেটা নিয়ে ভেবে কি হবে? আমি আমার মেয়েকে বলেছি, কাকে বিয়ে করছো এটা গুরুত্বপূর্ণ না যদি তুমি সুখী থাকো।' 

লিয়াকতের পরিবারের আরও মানুষজন পাকিস্তানে আছেন। যাঁরা দেশভাগের সময় সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে এসব না ভেবে তাঁর একটাই অপেক্ষা, কখন মেয়ে, নাতনী আর জামাতার সঙ্গে দেখা হবে। এ নিয়ে অপেক্ষার তর সইছে না লিয়াকতের।

মেয়ে-নাতনীর জন্য অধীর অপেক্ষার মাঝে বিরাট কোহলির জন্য নিজের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতে পারেননি লিয়াকত। সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকারের খেলা লিয়াকতের কাছে সর্বকালের সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার কোহলি, আমার মনে হয় না এই যুগে বিরাট কোহলির চেয়ে কেউ এগিয়ে আছে। হ্যাঁ মাঝে তার সময় খারাপ গেছে। কিন্তু সে ঘুরে দাঁড়িয়েছ। যদিও এখনো তার সেরা সময়ে আসেনি কিন্তু বাকিদের চেয়ে সে অনেকটা এগিয়ে।' 

লিয়াকতের মন বলছে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করবেন কোহলি। আরেকটি চাওয়ার কথাও গোপন রাখেননি তিনি। ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান 'যুদ্ধে' জামাতা হাসানকে একাদশে চাওয়া লিয়াকতের। তাঁর দুটো আশা পূরণ হওয়া দেখতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।