১৫০৯ মিনিট আগের আপডেট; দিন ১০:০৮; মঙ্গলবার ; ১৫ এপ্রিল ২০২৪

আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে: মিয়ানমার

অনলাইন ডেস্ক: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২৬

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকলে ৩টায় শুরু হওয়া শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। এরপর বক্তব্য দেন মিয়ানমারের আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার ও ফোবে ওকোয়া।

ফোবে ওকোয়া তার বক্তব্যের শুরুতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নির্দেশনার বিষয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানামারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চলমান প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। ইউএনএইচসিআর মাঠপর্যায় থেকে প্রত্যাবাসন তদারক করবে এবং কোনো ধরনের ঝুঁকি দেখলে তারা তা জানাতে পারবে। সুতরাং, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে চলতে দেওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় বোঝা যাদের ঘাড়ে পড়েছে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সম্মত কার্যবিবরণীতে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমত হয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারে আশু কোনো গণহত্যার ঝুঁকির কথা বলছে না।

ফোবে ওকোয়ার আগে আদালতে কথা বলেন মিয়ানমারের অপর আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার। গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়েছে সেগুলো কেন দেওয়া উচিত নয়, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন তিনি।

ক্রিস্টোফার স্টকার বলেন, আদালত যদি অন্তর্বর্তী আদেশ দেয় তাহলে সেগুলো প্রতিপালনের বাস্তবতাও বিবেচনায় নিতে হবে। মিয়ানমার সনদ লঙ্ঘনের মতো কোনো আচরণ করেছে বলে স্বীকার করে না। সুতরাং, বিরোধের গুণগত দিক বিচার না করে আদালত কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে পারেন না।

তিনি বলেন, গণহত্যার প্রশ্নে অন্য যেসব দেশ মামলা করেছে তারা সবাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গণহত্যা সনদের আওতায় কোনো আবেদন করতে হলে সরাসরি সংক্ষুব্ধ হওয়ার প্রশ্নটিকে অস্বীকার করা যায় না। মিয়ানমারের ঘটনাবলীতে যদি কোনো দেশ সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকে, সেটা হওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু, বাংলাদেশ গণহত্যা সনদের প্রযোজ্য ধারাটি গ্রহণ না করায় কোনো মামলা করার অধিকার রাখে না। কার্যত লাওস ছাড়া মিয়ানমারের অন্য কোনো প্রতিবেশীই এমন মামলা করতে পারে না। গণহত্যা সনদের অধীনে গাম্বিয়ার যদি সত্যিই কোনো বিরোধ থাকতো, তাহলে দেশটি শুরু থেকে সে কথা বলেনি কেন? গণহত্যা সনদের কথা তারা তুলেছে শুধুমাত্র ওআইসির তরফে মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর।

এরআগে শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলাটি 'অসম্পূর্ণ' ও 'বিভ্রান্তিকর'।

সু চি বলেন, আরাকান আর্মির সংঘর্ষের কারণে রাখাইনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০১৬ সালে ক্রমাগত আক্রমণ চালায় আরসা। ২০১৭ সালের আগস্টে আরসা একটি সামরিক চৌকি ধ্বংস ও ৩০ জন পুলিশকে হত্যা করে। এভাবে তারা ১২টি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সশস্ত্র অভিযান চালায়। মিয়ানমারের 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন'কে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে গাম্বিয়া।

অং সান সু চি বলেন, সেনাবাহিনী কোনো জেনোসাইড করলে সংবিধান অনুযায়ী মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা কোর্ট মার্শাল করে। সেই ধারবাহিকতায় ২৯ জন সেনা সদস্যসহ এক হাজার ৩২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরো গভীর অনুসন্ধানের অনুরোধ করছি গাম্বিয়াকে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে মিয়ানমার সরকার মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিক আইনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা অনেক দ্রুত।

শুনানির প্রথম দিন মঙ্গলবার মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রতি আহ্বান জানায় গাম্বিয়া। বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানি শুরু হবে।

‘ওয়ার্ল্ড কোর্ট’ বা বিশ্ব আদালত হিসেবে পরিচিত আইসিজেতে গত মাসে মামলা করে গাম্বিয়া। এতে কূটনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ওআইসি। শুনানি শুরুর আগের দিন সোমবার গাম্বিয়ার উদ্যোগকে সমর্থন দেয় কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।

তিন দিনব্যাপী শুনানি চলাকালে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইসিজে’র ওয়েবসাইটে (www.icj-cij.org) শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের গণমাধ্যমকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ এই শুনানি দেখছেন।