৫৭০ মিনিট আগের আপডেট; দিন ১:০৮; শুক্রবার ; ২৫ এপ্রিল ২০২৪

খুঁজে বেড়াই মুমিন বান্দা

অনলাইন ডেস্ক: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৩২

খাঁটি মানুষ বা খাঁটি মুসলমান পাওয়া এখন মুশকিল। মানুষের সম্পদ বাড়ছে, ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু সোনার মানুষ আর সহজে মেলে না। দিন দিন সুন্দর অবয়বের আড়ালে কুৎসিত মনোবৃত্তি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়- চামড়া আছে/মানুষ নেই/রং আছে প্রাণ নেই।

কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, আল্লাহতে যার পূর্ণ ইমান কোথা সে মুসলমান? বাউল সম্রাট আবদুল করিম বলেছেন- হও যদি খাঁটি মুসলমান/ভেতর বাহির করো সমান/যে হবে মোনাফেক নাদান/নরকে হবে ঠাঁই/শরিয়তে আছ তুমি তরিকতে নাই।

একটি ঘটনা মনে পড়ছে। প্রায় সাত বছর আগে এক বাড়িতে গেলাম রোগী দেখতে। রোগী দেখে মসজিদে গেলাম জুমার নামাজ পড়তে। সেদিন নির্ধারিত ইমাম উপস্থিত ছিলেন না। খুতবা এবং নামাজ পড়ালেন অন্য ব্যক্তি। দাড়ি টুপি খুব সুন্দর। দেখতে প্রথম শ্রেণির শিক্ষিত বলে মনে হল।

লক্ষ করার বিষয় ছিল, খুতবায় বেশিরভাগ শব্দ উচ্চারণ করলেন। সুন্দর সুন্দর কথার মালা গাঁথলেন। যেন আমি অবাক হলাম এই অজপাড়াগাঁয়ে ইনি কে? কোথা থেকে আসা। জানলাম ওই পাড়ারই তিনি, মসজিদদাতাদের পরিবারের সদস্য এবং থাকেন ইংল্যান্ডে। ইঞ্জিনিয়ার বলে মোটা টাকা কামান। দেশে ২-৩ বছর পরপর একবার আসেন।

কেউ কেউ বললেন, ওখানে ইনি তাবলিগও করেন। আমাকে ডাকার কারণ হচ্ছে দেশের আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি এসেছি চিকিৎসা করতে। রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, কম করে হলেও ভিজিট হিসেবে পাঁচশ’ টাকার একটা নোট গুঁজে দেবেন। কিন্তু আশ্চর্য! নট এ সিঙ্গেল নোট! যেহেতু কাদা-পানি মাড়িয়ে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি, ভিজিটের আশায় কিছু সময় বসে রইলাম। কিন্তু না, ভিজিট মিলল না। রোগীর মা আমাকে ভাত খেতে বললেন। আমি অগত্যা কিছু সময় বসে থেকে ফিরে এলাম।

আসার সময় রোগী আমার মোবাইল নম্বর চাইলেন। রাস্তা ধরে হাঁটছি আর ভাবছি, মসজিদে বসে এত মিষ্টি ওয়াজ করে লাভ কী? আমরা যদি অন্যকে না বুঝি। নিজের লাভটাই ষোলো আনা বুঝি!

আবদুল করিমের কাছে ফিরে যাই। তিনি বলেছেন, এ সংসারের ভোজবাজি/বুঝে না মন বড় পাজি/আসল কাজে হয় না রাজি। প্লেটো বলেছেন- সম্পত্তি, পারিবারিক আকর্ষণ এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ মানুষকে কর্তব্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আর মানুষ তো ধন- সম্পদের লালসায় মেতে আছে। (সূরা আদিয়াত : ৮)।

আমার মনে হয় আমরা ভুলে গেছি আরও একটি মত ও পথ আছে। সেটা মানুষেরই জন্য। মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে শান্তি, সুন্দর এবং কল্যাণের জন্য। পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা মানুষের হৃদয়ে যে গুপ্তধন গচ্ছিত রেখেছেন তা অন্য কোনো প্রাণীকে দেননি। কিন্তু আমরা বুঝতে রাজি নই, সব ভুলে দুনিয়ায় ডুবে আছি। মানুষের সার্বিক সুন্দর কম হচ্ছে, সৃষ্ট জীবের কল্যাণ করা।

কিন্তু কীভাবে, কোন পথে সার্বিক কল্যাণ করা যাবে? প্রিয়তম নবী (সা.)-এর দেখানো মত ও পথের অনুসরণ করে। শুধু নামাজ রোজা আর মসজিদে বসে নয়। কাজের গতি বাড়িয়ে প্রমাণ করা প্রয়োজন যে, নবীজি যেসব কাজ করেছেন, যেভাবে মানুষকে ভালো বেসেছেন আমরাও তা পালন করব।