১০৩১ মিনিট আগের আপডেট; দিন ১১:৫৫; শুক্রবার ; ২৮ মার্চ ২০২৪

চাই নিশ্চিন্ত নির্বিঘ্ন নতুন বছর

শাহীন মাহমুদ রাসেল ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৪৯

পৃথিবীর বর্ষপরিক্রমায় যুক্ত হলো আরেকটি পালক। নতুন একটি বর্ষে পদার্পণ করল এই অধরা। দিনে দিনে বর্ষ শেষ হয়ে এলো। ইতিহাসের পাতায় নথিভুক্ত হলো আরও একটি বছর ২০২০। সম্ভাবনার অপার বারতা নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। স্বাগত ইংরেজি নববর্ষ, স্বাগত ২০২০।

৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে ভূমিষ্ঠ হলো নতুন একটি বছর। পুরনো একটি বছরকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দুরন্ত আহ্বানে মানুষ স্বাগত জানাবে অনাগত ভবিষ্যৎকে। সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে ইংরেজি নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি শুরু হয় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার পরে। যা থার্টিফার্স্ট নাইট নামে পরিচিত। পশ্চিমা সংস্কৃতির এই থার্টিফার্সদ্ব নাইটের হাওয়া আমাদের দেশেও এসে লেগেছে। 

পৃথিবীর প্রায় সব জাতি নববর্ষের প্রথম দিনটি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে। জাতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে এই বর্ষবরণ সম্পৃক্ত। ইরান, গ্রিস, ইতালি, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের নিজস্ব কৃষ্টি অনুযায়ী নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। শুধু ইউরোপের কিছু দেশ আর আমেরিকা এই দিনটিকে জানুয়ারি মাসে 'নিউ ইয়ার্স ডে' হিসেবে পালন করে।

নববর্ষ পালনের উদ্দেশ্য হলো নতুন উৎসাহ, নতুন প্রেরণা, নতুন আশা, নতুন স্বপ্নে জীবনকে শুরু করা। যা দেশ ও সমাজ তথা বিশ্বের জন্য বয়ে আনবে কল্যাণ। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার উৎসব নতুন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এ রীতির প্রচলন রয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সর্বজনীন উৎসবগুলোর মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অন্যতম একটি। 

আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে নববর্ষ পালনের রীতি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ সূত্রমতে, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ব্যাবিলনবাসীরা প্রায় ২ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে বিপুল আয়োজনে বর্ষবরণ শুরু করে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে।

খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমান সিনেটররা ঘোষণা করেন জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পহেলা দিন। তার পরও খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বলা হয়। পরে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। সেই অনুসারে বিশ্বব্যাপী ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে।

পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডার বর্ষ রয়েছে। বর্ষ পরিক্রমায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে নতুন সম্ভাবনা আর নবদিগন্তের সূচনা নিয়ে। বছরের শেষ সূর্যোদয়ে মানুষের একান্ত প্রার্থনা থাকে আগামী প্রজন্ম যেন সুখের বারতা বয়ে আনে। আশা-নিরাশার দোলাচলে মানুষ এগিয়ে চলে স্বপ্নকে পুঁজি করে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস প্রত্যেকেরই। 

বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য ব্যথিত না হয়ে বরং নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে।
নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরের শেষ দিনটিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নতুন বছরকে বরণের জন্য উৎসবে মেতে ওঠে। প্রত্যেক জাতি বা রাষ্ট্রের নিজস্ব নববর্ষ আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ আয়োজন তাদের রাষ্ট্রীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে ইংরেজি বর্ষ অর্থাৎ খ্রিস্টীয় দিন গণনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ গণনার প্রচলন রয়েছে। তাই ইংরেজি নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।

ইংরেজি নববর্ষ পালন সারা পৃথিবীতে একই ধরনের। তবে পশ্চিমা বিশ্বে এর আনন্দ একটু বেশি। আমাদের দেশেও নিউ ইয়ার বা ইংরেজি নববর্ষ পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি চোখে পড়ে। পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিরা এখন আনন্দে মেতে উঠেছে। থার্টিফার্স্ট পালনের উৎসবে আত্মহারা হয়ে যায় বাঙালি তরুণ-তরুণীরা। ভিনদেশি রেওয়াজ মেনে দিনটি উদযাপন করতে গিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক আয়োজনই যুক্ত হয় থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎসবে।

তবুও নতুন বছরের আগমনে প্রথম দিনের প্রথম প্রহরে বাড়তি রোমাঞ্চ নিয়ে উন্মাদনায় মেতে ওঠে সবাই। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় রাতের আঁধার। আতশবাজি, আর রঙিন আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে মানুষের মন। ইংরেজি নববর্ষের এই শুভলগ্নে সারা পৃথিবীর মানুষ সমবেত হয় আনন্দ আয়োজনে। উৎফুল্ল মানুষ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানায় নতুন বছরকে আর প্রার্থনা থাকে সব বাধা-বিঘ্ন কেটে গিয়ে পৃথিবীতে নতুন সূর্য উদিত হওয়ার।