৩ মিনিট আগের আপডেট; রাত ৪:২৭; শুক্রবার ; ২৯ মার্চ ২০২৪

করোনাকালে বয়স্কদের যত্ন

সু-স্বাস্থ্য ডেস্ক ৩০ জুন ২০২০, ২০:৫১

বাবা কিংবা মা- সন্তানের জন্য সবচেয়ে নির্ভরতা আর প্রশ্রয়ের জায়গা। তাদের ভালোবাসার কথা কি আর নতুন করে বলে দিতে হবে! যতটা যত্নে মা তার গর্ভে লালন করেন, যতটা ত্যাগে বাবা আমাদের বড় করেন- এতখানি ভালোবাসা আর কোথায় মিলবে?

আমরা বড় হতে হতে আমাদের বাবা-মা বয়স্ক হতে থাকেন। ঢেউয়ের মতো আমরা একের পেছনে আরেক ছুটে যাই, কেউ-কাউকে ধরতে পারি না। তাই তো আমাদের তারুণ্যে তাদের বৃদ্ধকাল এসে উপস্থিত হয়। বয়স্ক মা-বাবারা অনেকটা শিশুর মতো হয়ে যান। তারা অনেক কিছুতেই আর নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না। তখন আমাদের দায়িত্ব হল- তাদের সেসব খেয়াল রাখা। আমাদের ছেলেবেলায় যেভাবে যত্ন আর ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন ততটা সম্ভব হবে না- জানি। তবে যতটা সাধ্য তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।

পৃথিবীজুড়ে যে অসুখ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কথা ইতোমধ্যে সবাই জেনেছেন নিশ্চয়ই। এ মরণঘাতি করোনাভাইরাসের থাবা সবচেয়ে বেশি মারাÍক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। পরিস্থিতির বিবেচনায় এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এ মুহূর্তে অন্যদের থেকেও বেশি যত্নের প্রয়োজন বয়স্কদের ক্ষেত্রে। বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা বা যে কোনো সদস্য থাকলে তার প্রতি যত্নবান হোন।

সুযোগ পেলেই আপনার বাইরে যেতে ভালো লাগে? তবু এ বয়স্ক মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত ঘরে থাকুন। এ মুহূর্তে ঘরে থাকাটাই নিজের এবং সবার জন্য নিরাপদ। যদি একান্তই বের হতে হয় তবে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হন। আবার বাসায় ফিরে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নিন। বয়স্কদের কক্ষে যাওয়ার আগে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করে তবেই প্রবেশ করুন।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। একজন তরুণ এবং একজন বৃদ্ধের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কখনই সমান হবে না। টগবগে তারুণ্য আর অস্তমিত বৃদ্ধকাল- এক নয়। তাই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রবীণদের দরকার পড়ে বাড়তি যত্নের। বাড়ির বয়স্কদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। যে দীর্ঘ জীবন তারা নানা অভিজ্ঞতায় কাটিয়ে এসেছেন, সেসবের গল্প শুনুন সময় করে। অনেক অজানাকে জানা সম্ভব হবে। তাদেরও ভালো সময় কাটবে। এ বয়সে মানুষ নিঃসঙ্গতায় ভুগতে শুরু করে। বন্ধু থাকে না, গল্প করার মানুষ থাকে না। তাই তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে তাদের মন অনেকটাই ফুরফুরে থাকবে। আর মন ভালো থাকলে ভালো থাকবে শরীরও।

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে তাদের বাঁচাতে সব ধরনের সাবধানতা মেনে চলতে হবে। তারা বাইরে যেতে চাইলেও যেতে দেবেন না। চেষ্টা করুন বাড়িতে আনন্দে রাখতে। বাড়িতে ছোটরা থাকলে তাদের সঙ্গেও সময় কাটাতে দিতে পারেন। করোনাভাইরাস সম্পর্কে তাদের বুঝিয়ে বলুন। কারণ বর্তমান পৃথিবীর অনেক কিছুই তারা জানেন না। এ ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর, সেই ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত করুন। তবে হ্যাঁ, তাদের ঘাবড়ে দেবেন না। পাশাপাশি একথাও বলুন- একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই থাকা যাবে নিরাপদ।

তাদের খাবারের দিকে নজর দিন। খেতে চাচ্ছে বলেই তাদের জন্য ক্ষতিকর কোনো খাবার খেতে দেবেন না। বরং চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী খেতে দিন। স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস করান। সিগারেট, পান ও তামাকের অভ্যাস থাকলে তা ধীরে ধীরে বাদ দেয়ার চেষ্টা করতে বলুন। তাদের শরীর যথেষ্ট পুষ্টি পাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। মনে রাখবেন, তারা কিন্তু এখন অনেকটা শিশুর মতোই। শিশুরা যেমন নিজের যত্ন নিজে নিতে পারে না, প্রবীণদের ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই।

তাই তাদের যত্নের ভার নিন আপনিও। ওষুধ নিয়ম করে খাচ্ছে কিনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা- সেসবের খোঁজ রাখুন। নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে হয়ে যান অভিভাবক, অবসরে আর আড্ডায় হোন বন্ধু। ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। ভালোবাসার শক্তির কাছে পরাজিত হোক মরণঘাতি ভাইরাসের শক্তি। পৃথিবী জানুক, পৃথিবী টিকে থাকে পারস্পরিক ভালোবাসা আর নির্ভরতার বন্ধনে।