১৩০১ মিনিট আগের আপডেট; রাত ৪:২৪; বৃহস্পতিবার ; ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান জরুরি

এমডি ফরিদুল আলম ১৩ অক্টোবর ২০২০, ২২:৪৮

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ইতিবৃত্ত বিশ্ববাসীর জানা। ২০১৬-২০১৭ সালে তাদের উপর পৈশাচিক- বর্বরোচিত ঘটনার পূর্বে ন্যূনতম এক মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা মিয়ারমারে বসবাস করতো বলে তথ্যসূত্রে জানা যায়। তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা বহু আগে থেকে। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার তাদের উপর সামরিক নির্যাতন চালানো হয়।

১৯৮২ সালে বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন পাশ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। সেই সাথে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, আন্দোলনের স্বাধীনতা ও সরকারি চাকুরীতে নিষিদ্ধ করা হয়। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা দুরূহ হলে একেবারে গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ পরিকল্পনায় তারা ছিল বদ্ধপরিকর।

রোহিঙ্গাদের পৈশাচিক- বর্বরতার মধ্যদিয়ে মিয়ানমারের আততায়ীরা প্রমাণ করেছে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্দয়-নিষ্ঠুর জাতি। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। মিয়ানমারের আততায়ীদের বিবেক ও মানবতা হিংস্রতার জালে আটকা পড়েছে বহু পূর্বে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েপড়া একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাস্তায় দু’জন কিশোরকে লাথি মারতে-মারতে এগিয়ে নিচ্ছিল একজন পুলিশ সদস্য। এই ভিডিওটি প্রকাশ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র শোরগোল সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে সবার। ২০১৭ সালে হাজার-হাজার রোহিঙ্গা বানের জলের মতো টেকনাফ সীমান্তে আসা শুরু করে। একা কিংবা স্বজনদের নিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে পড়ে।

আরাকানে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গারা পাহাড়- পর্বত, বনানীতে লুকিয়ে জীবনবাজি রেখে নাফ নদী পার হয়। বিজিবি কর্তৃক কয়েকবার পুশব্যক করা হলেও অবশেষে বাংলাদেশের মায়া জালে আটকা পড়ে তারা। অসংখ্য রোহিঙ্গাদের উপর বার্মা সন্ত্রাসীদের পাষন্ডতা ও গণহত্যা দেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিবেক নাড়া দেয়। মানবিকতার বিষয়টি গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ৩২টি ক্যাম্পে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয়ের বন্দোবস্ত হয়।

বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল বলেই সমগ্র বাংলাদেশ থেকে যে যেভাবে সম্ভব ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে ছুটে যান। তখন বিশ্ব মিডিয়াও সোচ্চার ছিল! তা দেখে বিশ্বনেতা, বলিউডের হার্টথ্রব নায়িকা থেকে শুরু করে অনেকেই রোহিঙ্গাদের কাছে ছুটে এলেন। এদের মধ্যে কারো কারো অশ্রুও দেখা যায়। বিবেকের তাড়নায় রোহিঙ্গাদের কাছে ছুটে এলেন ঠিকই, কিন্তু বিমান উড্ডয়নের পর আর কোন খবর নেই।

রোহিঙ্গাদের এই আশ্রয় এখন বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হতে চলেছে। তারা এদেশের ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়ে নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়দের উপর নিয়মিত হামলা যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক, চুরি,ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাদের শিকড় কতো মজবুত হতে চলেছে তা সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায়। এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

অথচ সংস্থাটির কাছে এই বিষয়টি মোটেও মনে হয়নি তাদের কারণে বাংলাদেশ হুমকির মুখে। প্রতিবছর তারা অসংখ্য সন্তান জন্ম দিচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যু ক্রমশ একটি সংকট ও চিন্তার বিষয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী গ্রুপ। সম্প্রতি দুই গ্রæপের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও গোলাগুলিতে বেশ কজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এমনও ঘটেছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মুখে খাবার তুলে দেয়া স্থানীয় বাংলাদেশিকে নৃসংশভাবে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুতুপালং ক্যাম্পে এখন থমথমে অবস্থা।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ফলাফল কি এই অপরাধ প্রবণতা! বাংলাদেশের তাদের আশ্রয় তিন বছর পেরিয়ে গেলো। এখন তাদের আরাকানে ফেরানো যেন দায়! একদিকে তারা বাংলাদেশ ছাড়তে চাইছে না; অন্যদিকে মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নেয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা বারবার আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে চলেছে। তাহলে কি রোহিঙ্গা ইস্যুটি কেবল ইস্যু হিসেবে রয়ে যাবে!

ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। কক্সবাজার এই স্বাধীন দেশ তথা ভূখন্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রোহিঙ্গাদের ক্রমবর্ধমান অপরাধের কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আরো বেশি হুমকীর মুখে। তাই দেশের বা আন্তর্জাতিক বা যৌথ প্রচেষ্টায় যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক