২০৫৮ মিনিট আগের আপডেট; দিন ৩:৪৮; বৃহস্পতিবার ; ৩০ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০২

অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ইংল্যান্ডের ঘরে। শেষ পর্বে বাবর আজম ইমরান খাঁনের ম্যাজিক দেখাতে পারললেনা।

দীর্ঘদিন পর স্বপ্নের সীমানায় হাজির হয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপ। স্বপ্নের চোরাবালিতেই এ ক’দিন হাবুডুবু খেয়েছিল পাকিস্তান। টানটান উত্তেজনা ঘিরে ধরেছিল তাদের।

বাবর আজম কি ইমরান খান হবেন? এমন কথা এসেছে। সংবাদ সম্মেলনের ভরা মজলিসে বাবরকে জানানো হয়েছে, ‘ফতেহ আজম’ বা জয়ী নেতা থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে তিনি।  

পাকিস্তানের ‘কুদরত-ই নিজাম’ অবশ্য ফাইনালে থামিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। লো স্কোরিং ম্যাচে লড়াই হয়েছে বটে। তবে দিনশেষে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ডের ‘প্রসেস’।

দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে শুরুতে খেই হারিয়েছে তারা। তবে দিনশেষে অভিজ্ঞতা, ধৈর্য আর দলের গভীরতায় জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।   রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে তারা। টস হেরে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের সামনে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল পাকিস্তান।

জবাব দিতে নেমে ৬ বল আগেই জিতেছে জশ বাটলারের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা দুইবার টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছে তারা।  

শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশ পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে রান তুলতে বেশ কষ্ট করতে হয় দুই পাকিস্তানি ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। এরপর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে স্যাম কারানের বলে রিজওয়ান বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙে দুজনের ২৯ রানের জুটি। ১৪ বলে ১৫ রান করেন রিজওয়ান।  

তার বিদায়ের পর তিনে নামা মোহাম্মদ হারিসও ফেরেন দ্রুতই। বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা এই ব্যাটার ১২ বলে করেন ৮ রান। ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদের বলে বেন স্টোকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর শান মাসুদের সঙ্গে জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন বাবর আজম।

একপ্রান্ত আগলে রেখে ধীরে ধীরে রান তোলার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও টিকতে পারেননি তিনি। ১২তম ওভারে বোলার রশিদের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাকিস্তানি অধিনায়ক। বিদায়ের আগে বাবরের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৩২ রান। বাবরের পর ইফতিখার আহমেদ বিদায় নেন বেন স্টোকসের বলে; রানের খাতা খোলার আগেই। এরপর হাল ধরেন শান মাসুদ। ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে তিনিও বিদায় নেন দলকে ভালো অবস্থানে নেওয়ার আগে।

স্যাম কারানের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ রান আসে শানের ব্যাট থেকে। শানের বিদায়ের পর ২ রান যোগ হতেই ফেরেন আরেক সেট ব্যাটার শাদাব খান। ১৪ বলে ২০ রান করা এই অলরাউন্ডারকে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ক্রিস জর্ডান। চাপের মুখে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান।

১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে কারানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন মোহাম্মদ নওয়াজ। এরপর শেষ ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমের উইকেট হারিয়ে ৬ রান তুলতে পারে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।

 বল হাতে ইংল্যান্ডের কারান ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান খরচে তিন উইকেট নেন। এছাড়া আদিল রশিদ ও ক্রিস জর্ডান ২টি করে উইকেট পান। বাকি উইকেট স্টোকসের। জবাব দিতে নামা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যথারীতি পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ওভার করতে আসেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার প্রথম পাঁচ বল থেকে ৭ রান নেন দুই ওপেনার জশ বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস। ওভারের শেষ বলেই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন শাহিন।   তার সুইং করা বল আঘাত হানে হেলসের স্টাম্পে। দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটার। ২ বলে ১ রান করে ফিরতে হয় তাকে।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৬৯ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানো উদ্বোধনী জুটি ফাইনালে ভেঙে যায় কেবল ৭ রানে।   এরপর ক্রিজে এসে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান ফিল সল্ট। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি উইকেটে। হারিস রউফের বলে ইফতেখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৯ বলে করেন ১০ রান।   দুই উইকেট হারানোর পরও চাপ অনুভব হচ্ছিল না ইংল্যান্ডের। কারণ উইকেটে ছিলেন দলের সবচেয়ে বড় ভরসা অধিনায়ক বাটলার। কিন্তু তাকেও ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ২৬ রান করা বাটলার আউট হন। ৪৫ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড।

এই চাপ সামলানোর দায়িত্ব নেন বেন স্টোকস। ‘বিগ ম্যাচ প্লেয়ার’ হিসেবে তার খ্যাতি আগে থেকেই। প্রথমে হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। ২৩ বলে ২০ রান করে শাদাব খানের বলে আউট হন ব্রুক।   এরপর মনে হচ্ছিল কিছুটা চাপেই বোধ হয় পড়ে গেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু বেন স্টোকস খেলতে থাকেন ঠাণ্ডা মাথায়। এর মধ্যে ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তান। স্টোকস মাঠে থেকেই দলকে জেতান আরও একটি বিশ্বকাপ।   ৪৯ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটিই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। নিজের নামের সঙ্গে বসা বিশেষণেরই যেন স্বার্থকতা জানান দেন স্টোকস। মাঝে ১২ বলে ১৯ রান করেন মঈন আলি। এক ওভার হাতে রেখেই জিতে যায় ইংল্যান্ড।